নেতা মঞ্চে ভাষণ দিচ্ছেন। মাদকের বিরদ্ধে বেশ উচ্চকণ্ঠ তিনি। মাদক ব্যবসায়ীদের গালিগালাজ দেওয়া ছাড়াও তাঁদের ধরে পেটানোর হুমকিও দিচ্ছেন ক্ষমতাশালী নেতা। এমন অনলবর্ষী বক্তব্যে বেশ তালিও পাওয়া যায়। কিন্তু সেই নেতার আপনজন, ঘনিষ্ঠেরাই যদি মাদক ব্যবসা ও সেবনের সাথে জড়িত থাকেন, তাহলে ব্যাপারটি কেমন হয়! না, বাংলা সিনেমার কোনো স্ক্রিপ্ট লেখা হচ্ছে না। ঢাকার নিকটবর্তী নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতবপুরের চিত্র এমনই বলে মতামত জনসাধারণের। প্রকাশ্যে মুখ খুলতে না পারলেও বক্তাদের এমন হাস্যকর কার্যকলাপের ব্যাপারে নিকটজনদের কাছে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, ভৌগোলিক অবস্থান, যোগাযোগব্যবস্থায় সুবিধাজনক দিক, শ্রমঘন এলাকা-সব মিলিয়ে কুতুবপুর বরাবরই মাদক ব্যবসায়ীদের টার্গেট পয়েন্ট। আর এর সুযোগ মাদক ব্যবসায়ীরা নিচ্ছে বেশ ভালোভাবেই। ইউনিয়নের রসুলপুর, নয়ামাটি, শরীফবাগ, আমতলা, শাহীবাজার, বউবাজার, চিতাশাল, মুন্সিবাগ, বাদামতলা, শহীদনগর, আদর্শনগর, নূরবাগ, কুসুমবাগ, খালপাড়, দেলপাড়া, রেললাইন, আলীগঞ্জ, নন্দলালপুর, আলীগঞ্জ, শিয়াচর,ভূইগড়, মাহমুদপুর, রঘুনাথপুর, তুষারধারা, পাগলা, জেলেপাড়া, মুসলিমপাড়া, রামারবাগ, লামাপাড়া, পিঠালীপুল, নিশ্চিন্তপুরসহ আনাচেকানাচে চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা।
আর এক্ষেত্রে রাজনৈতিক শেল্টার হয়ে উঠছে মাদক ব্যবসায়ীদের প্রধান হাতিয়ার। অভিযোগ আছে, এই অঞ্চলের মূলধারার অনেক রাজনৈতিক নেতা সরাসরি মাদক ব্যবসায় শেল্টার দিয়ে থাকেন। এমনকি অনেকের পরিবারের সদস্যেরাও মাদক সেবন ও ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত। এছাড়া অনেক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীকে শেল্টার দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে নেতাদের বিরুদ্ধে। মাদক ব্যবসায় অভিযুক্ত অনেককেই নেতাদের আশেপাশে দেখা যায়। এমনকি বিভিন্ন উপলক্ষে নেতাদের ছবি ব্যবহার করে ব্যানার-ফেস্টুনও তৈরি করেন তারা। আর মাদক ব্যবসার মাধ্যমেই অঢেল অর্থের মালিক হয়েছেন নেতাদের কেউ কেউ, এমন গুঞ্জনও চাউর আছে।
কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতের সঙ্গেও মাদকের পরোক্ষ সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিমত বিশিষ্টজনদের। তারা বলছেন, সুলভে মাদক দিয়েই উঠতি কিশোরদের গ্যাংয়ে ভেড়ানো হয়। একসময় মাদকের অর্থ জোগাতে সেইসব কিশোরেরা হয়ে উঠে মাদক ব্যবসায়ী। ব্যবসা ও আধিপত্য বজায় রাখতে সংঘাতেও জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় তাদের।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে রাজনৈতিক দলগুলোর হাইকমান্ডকে সচেতন হতে হবে বলে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। এছাড়া উঠতি কিশোর-তরুণদের অভিভাবদের সচেতন হওয়ার তাগিদও এসেছে।